আজ আমি এক আশ্চর্য স্বপ্ন
দেখে উঠলাম।
রক্ষক আর ভক্ষক-এর এমন
বিশ্লেষণ আগে কখনও অনুভব
করিনি।
দেখলাম হিরণ্যকশিপু,
বালি,
শিশুপাল, কংস, রাবণ এরা
আমার মধ্যে ঢুকছে আর
বেরোচ্ছে।
তারা করজোড়ে তাদের
হত্যাকারীদের স্তুতি করছে।
হিরণ্যকশিপু বলছে,
হে প্রভু,
সবাই
তোমার উগ্র মূর্তি দেখলো,
তুমি
যে আমাকে কোলে তুলে
নিলে, সেটা
কেউ দেখল না?
কেন?
আমার পবিত্র প্রাণ বদ্ধ হয়েছিল
এক অপবিত্র দেহে, তুমি সযত্নে
তাকে মুক্ত করলে।
তোমার চরণে শতসহস্র প্রণাম।
দেখলাম বালি আর তিরস্কার করছে
না বিষ্ণু-অবতার রাম-কে।
দেখলাম কংস-কে, শিশুপাল
আর রাবণ-কে।
তাদের সম্মিলিত কণ্ঠ কৃতজ্ঞতায়
গেয়ে উঠছে,
তুমি রক্ষক, তুমি-ই
ভক্ষক প্রভু,
আমাদের সংহার করে আমাদের
উপকার করেছ, হে অনাথ-নাথ।
তোমার হাতে আমাদের
মৃত্যু-বরণ,
এ ত নয় সাধারণ।
...
আমি চমকে উঠে পড়লাম,
জল-এর জন্য হাত বাড়াতেই
মাটিতে কাঁচের গেলাস-টা
পড়ে ঝনঝন করে ভেঙে গেল,
আমার এতকাল-এর অটূট
বিশ্বাস-এর মত।
বুঝলাম আমার মধ্যে বাস
করছে কম-বেশি এনারা
সকলেই।
মনস্থ করলাম নিজে-কে
আর বাঁচাব না কোনভাবে-ই,
কোনমতে-ই;
প্রতিদিন চলার পথে,
অসংখ্য
মিথ্যে-কথা বলি, বিলাসিতা,
অহংকার-এর বলি হই
অসভ্য শিক্ষা-র ফলে।
ক্রোধে-র বিষোদ্গার-এ ভরিয়ে
ফেলি অহেতুক আমার ভুবন,
অর্থহীন
তর্কে, উচিত কথা-র
অছিলায় কুপিয়ে মারি বন্ধুত্ব,
সম্পর্ক;
হয় নিষ্ঠুর কথায় প্রকাশ করি,
নয়ত অশালীন চিন্তায় টুকরো
টুকরো করি আমার-ই মত
চেনা-পরিচিত মুখ-গুলি কে।
ক্ষতবিক্ষত হয় আমার
বাগান।
আমার মনে হল যেন আমি সমগ্র
মানবজাতির-ই প্রতিনিধিত্ব করছি।
হে বিষ্ণু, আমার
ভিতর অবস্থান কর,
আমাকে সংহার কর, তীরবিদ্ধ
কর,
ব্রহ্মাস্ত্রে
পরাজিত না হলে, অগ্নিবাণ
নিক্ষেপ কর, তারা
যেন সর্পের মত
আমায় আক্রমণ করে, আমাকে
পরাস্ত করে, আমায়
কর পরাজিত।
আমার থেকে সমস্ত বিকর্ম-গুলি
তোমার নখের জোরে উৎখাত কর।
তুমি আমার রক্ষক, আমার
ভক্ষক
হয়ে আমায় উদ্ধার কর। এইভাবে
আসুক চৈতন্য,
আমার আর আমার পৃথিবীর।