Friday, April 5, 2013

গন্ডি পূজো

গন্ডি পূজো

গন্ডি পূজো সেই কবেকার গল্প ! 
সীতাকে তার দেওর লক্ষণ 
গন্ডি কেটে দিয়ে বলেছিল 
তার বাইরে পা না ফেলতে, 
বিপদের আশঙ্কায়! 

তা নিয়ে যুগ যুগ ধ’রে কত লেখালেখি, 
কত প্রতিবাদ আঁছড়ে এসে পড়েছে 
আমাদের সমাজে – এ এক পুরুষশাসিত সমাজের অভিসন্ধি, 
তাই তারা মহিলাব্রিন্দের চারিধারে আঁকিকাটে, 
কেন রামের কোন গন্ডি নেই, ইত্যাদি প্রভিতি ৷ 
বেশ ৷ 
আমি শুধু গন্ডির কন্সেপ্টটা নিলাম ৷ 
এবারে দেখি এই গন্ডি 
প্রিথীবির কোনকোন জায়গায় দাগ কেটে চলেছে ৷ 
এ গন্ডি কি শুধু সীতাতেই সীমাবদ্ধ, 
নাকি এই আঁচড়ের দাগে জর্জরিত সারা বিশ্ব ! 
আমি অনেক উদাহরন দেব ঠিকই, 
কিন্তু তা কোন গন্ডি মেনে নয়, 
খানিকটা অনিয়মবৎ, ঘুরে, দৌড়ে, পাচিল টোপকে ৷

প্রথমে আসি দেশের গন্ডিতে ৷ 
লক্ষণরেখা এখানে নানাভাবে আঁকা ৷ 
দুঃখ এই যে যদিও এই গন্ডি কাটা হয় 
শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রনের জন্য, 
আমরা সেই গন্ডির আঁচড় কেটে দিয়েছি 
আমাদের মনের ভিতর ৷ 
এই দাগের ঘা ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত জায়গায় এমনভাবে 
যে তার আর প্রথম দ্বিতীয়র খেই পাই না ৷ 

অফিসে দেখি ইন্জিনিয়াররা 
একটা টেক্নিকাল গন্ডি কেটেছে, 
আর বাকিরা 
একটা নন্টেকনিকাল গন্ডি ! 
এইভাবে প্রফেশনাল কাটাকুটি ৷ 
ধর্মের আঁচড় ? 
হিঁন্দু, মুসলমান, কেরেস্তান, জু, আর পারসিরা 
দাগাদাগি ক’রে চলেছে যুগযুগ ধ’রে 
জীবন্তম্রিতের মত ! 
বড়লোক, গরীবলোক, 
শিক্ষীত, অশিক্ষীত 
দাগ কাটে 
ওয়েভলেন্গথের দোহাই দিয়ে ৷ 
অথচ 
আমরা জল, নদি, পাহাড়, পর্বত, ভাগ করতে পারলেও, 
হাওয়া কিন্তু ভাগ করতে পারিনি এখনও, 
কালেদিনে হয়ত তাও পারব ৷

এলোপ্যাথ, হোমিওপ্যাথ তাদের গন্ডি কেটে 
দোকানে বসে ত নিরামিশাসি আর আমিশাসিরা 
তাদের গন্ডি কেটে রেখেছে ! 
আমরা সবাই প্রতিনিয়ত কত রকমারি 
দাগ কেটে বাদ দিচ্ছি আমাদের নিজেদের 
তার যদি কেউ হদিস রাখত !
কি এর কারণ ? রাবনের ভয় ? 
প্রতিবছর তাকে পুড়িয়েও আমাদের ভয় মেটেনা ? 
কেন সেই রাবন প্রতিবছর ফিরে ফিরে আসে আমাদের জীবনে ? 
রামের হাতের মরণ বানটা খেয়ে আল্হাদিত রাবন 
রামকে বলেছিল যে সে ধন্য ৷ 
সে তাকে ধন্যবাদ দিয়েছিল তাকে মুক্তি দেবার জন্য ৷ 
কিন্তু আমরা সে সব কথা মনে রাখি কই, 
আমাদের শুধু রাবন পোড়ান চাই ৷ 
মজার ব্যাপার এই যে রাবন যেই দোষে দোষি, 
সেই দোষ কিন্তু রাবন পোড়ানর দলে 
অনেকের মধ্যেই থাকে ৷ 
আমরা হাজার বছর ধ’রে 
শুধু দোষিদের জালাই, দোষকে নয় ৷ 
তাই আমাদের গন্ডির ভিতরের রাবন 
ভয় দেখায় গন্ডির বাইরের রাবনকে ৷  

প্লেনেচরা লোকেরা, ট্রেনেচড়া লোকেদের সাথে আড়ি, 
জিবনে হাই এ্যাচিভাররা নন-এ্যাচিভারদের সাথে আড়ি ৷ 
‘You are known by the company you keep’ 
এক মহামন্ত্র যা বিদেশেও প্রচলিত, 
তাহলে এ কি বিলাতি সীতার গন্ডি ! 
মানুষ মনগড়া ভয় নিয়ে সমানে বাদ দিয়ে চলেছে 
অন্যরকম মানুষদের, আর তার মাসুলও দিতে হ’চ্ছে অনেক ! 
তাই আজ প্রত্যেক ধর্মেই ভাগাভাগি, 
আমরা ভাবি ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিগ্যাসে কোন জন’, 
এদিকে কে সাচ্চা হিন্দু বা সাচ্চা মুসলমান তা নিয়েও 
তাদের নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক, দাগাদাগি, ভাগাভাগি !

ইলেকশান ৷ 
গন্ডিপূজো কাকে বলে ! 
কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিআইএম-ত্রিনমূল 
ও আরও অনেকে তাদের নিজেদের গন্ডি কেটে ব’সে আছে ৷ 
একে অন্যের ওপর কাদা ছেটায় আর আমরা তা দেখি ৷ 
এখন মহাপ্রশ্ন হ’ল মোদি না রাহুল ? 
দেশের লোকেরা !
আমরা কি বলতে পারিনা যে তোমরা তোমাদের 
ঝগড়া মিটিয়ে ফেলে দুজনেই একসাথে কাজ কর, 
যাতে দেশের উন্নতি হয়, তার জন্য কাজ কর, 
নিজেদের গন্ডির থেকে বেরোও নির্ভয়ে ৷ 
নাঃ ৷ 
তাহলে ত খেলাটা ঠিক জমবে না ! 
এই গন্ডি রহস্যটা কিন্তু সব দলের নেতারাই জানেন, 
তাই ওনারা ঝগড়া ক’রে আমাদের এন্টারটেন করে 
টিভিতে আর মাঠেঘাটে 
আর আমরা আমাদের গন্ডির মধ্যেথেকে আনন্দও পাই ৷ 
অবধ শিশু বা একধরনের গন্ডারের মত ৷

তাহলে দেখা যাচ্ছে 
এ শুধু সীতার গন্ডি নয়? 
সারা প্রিথীবি ছারখার হ’চ্ছে এই লক্ষণরেখার আঁচড়ে ৷ 
এই গগনচুম্বি অশান্তি যে শুধুই মনগড়া, 
তা এত অস্ত্রস্স্ত্র, এত সৈন্যসামন্ত, 
এত শিশুসুলভ খুনাখুনির  সত্যতথ্যে ম্লান হ’য়ে যায় ৷ 
কত সিকিউরিটির খরচ 
আর তাদের ব্যর্থতার গ্লানি যে গন্ডিপূজারই 
এক আর্তনাদ তা কেন আমরা শুনতে পাইনা? 
এ যে এক বিশাল সর্দি বা মাইগ্রেনের মত 
আমাদের ভিতরে গন্ডি কেটে চলেছে 
হাজার হাজার বছর ধ’রে! 

কি হয় যদি আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নেই 
‘to cross the limit’? 
আমরা সবাই যদি সিদ্ধান্ত নেই 
গন্ডিচক্র থেকে বেরিয়ে পড়ার? 
আমি বলি একনিমেষে বিশ্বের 
সব বিষই উড়ে ঐ নীল আকাশে মিলিয়ে যাবে ৷

একমাত্র আকাশেই 
আজ অবধি কোন গন্ডির আঁচড় কাটতে পারেনি 
শিশুমানুষেরা ৷ 
আকাশ বলেনা 
‘do not cross the limit’, 
সেখানে নেই কোন লিমিট, 
নেই কোন গন্ডির গল্প, 
সে অস্বীকার করে আমাদের ভেজাল গন্ডিপূজো ৷

No comments:

Post a Comment