কবরমন্চ
একটা শক্ত সিমেন্টের কবর আমার বাগানে ৷ আমি সেটা খুঁড়ছি
আমাকে মাটির থেকে বার করব ব’লে ৷ কেউ কোথাও নেই ৷ আমি জানি মাটির নীচে আমি চাপা প’ড়ে
আছি ৷ বিরাট বড় একটা হাতুড়ী দিয়ে আমি কাজ শুরু করলাম ৷ হাতূড়ীর সাথে একটা স্পন্জ লাগান
আছে, তাই শব্দ হ’চ্ছে না, কাজেই আমার কারচুপি ধরা পড়ছে না ৷ এই হাতুড়ীটা আমার চেনা, ছোটবেলা
থেকে এটা দিয়ে আমার ভিতরে অনেক কথা, অনেক তথ্য ঢোকান হ’য়েছিল শব্দ ক’রে দিনে দুপূরে
ডাকাতি করার মত ৷
আমার শরীর এখন ঘর্মাক্ত ৷ কিন্তু আমি কিছুই ভাঙ্গতে পারছি
না ৷ ঠঙ্গ ঠঙ্গ আওয়াজ হ’চ্ছে না, তাই বোধহয় কাজ হ’চ্ছে না ৷ নাঃ, একটু জিরিয়ে নিতে
হবে এখন ৷ জল খেতে খেতে আমার নামটা পড়লাম, জন্ম, মৃত্যু কবে তাও পড়লাম ৷ এ বিশাল কাজ
কখন শেষ হবে জানিনা! আবার ঠোকা শুরু ৷
অনেকক্ষণই কাটল এইভাবে ৷ ইতিমধ্যে
আমার ঘাম ঝরতে ঝরতে আমার কবরের নীচে গিয়ে জমা হ’চ্ছে দেখলাম, আর সেখানে একটা কুলকুল
আওয়াজ শুনতে পেলাম ৷ হাতুড়ীটা যত্নভরে শুইয়ে রেখে ঐ আওয়াজটার কাছে গিয়ে দেখি ঐ ঘামজল
জ’মে একটা হাতুড়ীর আকার নিয়েছে, কিন্তু এই হাতুড়ীটা খুব নরম ৷ আমার কবরে উঠে পড়লাম,
পা ফেলতেই তবলার আওয়াজ এল ৷ ও হোঃ, এবার বুঝেছি, এটা সেই তবলার হাতুড়ী, কিন্তু এত নরম
একে তুলিই বা কি ক’রে, আর তুলে করবই বা কী, এ দিয়ে ত অত শক্ত কবর খোড়া যাবেনা, তা হ’লে
উপায় ?
তা তুলতে ত হবেই, তাই নীচু হ’য়ে দুহাত দিয়ে যতই তুলতে যাই,
ও ততই পিছলে যায়, ফসকে যায় ৷ আমি সিসিফাস নই, আমাকে কেউ শাপ দেয়নি, আমি নিজের কর্মেই
আজ আমার কবরের ওপর দাঁড়িয়ে, কাজেই ঐ জল হাতুড়ী আমাকে তুলতে হবেই ৷ অজস্রবার চেষ্টা
করলাম ৷ চোখের জল বেরোতে লাগল, আমি নীচু হ’য়ে, আবার দুহাত জোড় ক’রে তুললাম হাতুড়ীটা
! আর যেই আমি উঠে দাঁড়ালাম, আমার কবর আপনাআপনিই তরল হ’তে লাগল, আমার মন্চ গলে গিয়ে
আমায় নীচে নিয়ে যেতে লাগল, আমার হাতে তখনও জল হাতুড়ীটা রয়েছে দেখলাম ! আমার কঙ্কালে
পা ঠেকল, আর আমি আবার নীচু হ’য়ে ঐ হাতুড়ীটা কঙ্কালের গায় ছড়িয়ে আমার নাটক শেষ ক’রে
উঠলাম ৷